গাজীপুরে হত্যাচেষ্টা মামলার বাদীকে কাউন্সিলরের হুমকির অভিযোগ (ভিডিও)

মো. মেহেদী হাসান, বিশেষ প্রতিবেদক(গাজীপুর), দৈনিক সরেজমিন বার্তা:
গাজীপুর সদর থানায় মারপিট, চুরি, খুনের হুমকি, শ্লীলতাহানি ও হত্যার প্রচেষ্টার মামলায় অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে বাদীকে সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মজিবুর রহমান কর্তৃক মামলা না করার হুমকির অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ভিকটিম ফজলুল হকের মেয়ে মোছাঃ আয়শা আক্তার।
আয়শা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার পিতা, দাদা ও দাদীকে আসামীরা মেরে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে মুমুর্ষ অবস্থা করে ফেলা সত্বেও আসামীরা কাউন্সিলরের কাছের লোক হওয়ায় আসামীদের বিরুদ্ধে আমার করা অভিযোগ যাতে আমি তুলে নেই সে জন্য আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবুর রহমান মোবাইল ফোনে আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আমি যদি অভিযোগ না তুলি তাহলে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে।’
বাদীকে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর মো. মজিবুর রহমান দৈনিক সরেজমিন বার্তাকে জানান, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে আমি বাদীকে বলেছি, মামলা করে কি পাবি? কয় দিন জেল খাটাবি? মামলা করলে তোদের টাকা খাবে পুলিশ, সাংবাদিক, উকিলরা আর মামলা না করলে আমি ওদের কাছ থেকে কিছু জরিমানা নিয়ে দেই মীমাংসা হয়ে যা যেটা তোদের জন্য লাভ হবে।’
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোঃ কাওসার হোসাইন ও গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী আসাদুল্লাহ বাদল কাউন্সিলর মো. মজিবুর রহমানের মীমাংসার উদ্যোগের বিষয়ে জানান, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। হত্যার প্রচেষ্টার মামলা একটি মীমাংসা অযোগ্য মামলা, জনপ্রতিনিধি বা অন্য কেউ চাইলেই এ ঘটনায় মীমাংসার সুযোগ নেই। আর যেখানে বাদী মীমাংসা হতে চাচ্ছেনা সেখানে আসামীদের পক্ষ নিয়ে বাদীকে মীমাংসার চাপ দেয়াও একটি সহযোগিতামূলক অপরাধ, জনপ্রতিনিধি হিসেবে একজন কাউন্সিলর এটা করতে পারেনা।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার(২০মে) বিকেলে গাজীপুর নগরীর সদর থানাধীন পশ্চিম ভূরুলিয়ায় সাবেক কাউন্সিলর সওকত আলমের ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মোঃ সোহাগের নেতৃত্বে তার সঙ্গীরা প্রতিবেশি ফজলুল হক ও তার মা ও তার মামার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত ও যখম করে এবং গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা ফজলুল হক ও তার মামাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় স্কয়ার মেডিকেল সার্ভিস হাসপাতাল ও টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাষ্টার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। এ ঘটনায় ভিকটিম ফজলুল হকের মেয়ে মোছাঃ আয়শা আক্তার বাদী হয়ে পাঁচ জনকে আসামী ও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে বৃহস্পতিবার(২১ মে) সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন ১. মোঃ সোহাগ, পিং সিদ্দিকুর রহমান, ২. শেলী, স্বামী: সোহাগ উভয় স্থায়ী গ্রাম নওপাড়া, ৩. কবির হোসেন, পিং আলাউদ্দিন, ৪. হাসি, স্বামি: কবির হোসেন, উভয় স্থায়ী: গ্রাম- হদ্দেরভিটা, থানা- ত্রিশাল, জেলা- ময়মনসিংহ, ৪ জনের বর্তমান ঠিকানা: পশ্চিম ভূরুলিয়া, ময়লারটেক(চৌধুরী ভিলা), থানা-সদর, গাজীপুর মহানগর, ৫. লিলি, পিং মৃত লেহাজ উদ্দিন, ঠিকানা: পশ্চিম ভূরুলিয়া, ময়লারটেক(চৌধুরী ভিলা), থানা-সদর, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর।
মামলার বাদী আয়শা আক্তার এছাড়াও জানান, ‘মামলার প্রস্তুতিকাল থেকেই কাউন্সিলরসহ আসামীরা আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। ১ জন আসামী গ্রেপ্তার হলেও বাকী আসামীরা বাহিরে প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সুযোগ বুঝেই আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি, পুলিশকে অনুরোধ করব যাতে বাকি আসামীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করে।’
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর ভূইয়া জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে মূল আসামীকে গ্রেপ্তার করেছি এবং বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
কোন মন্তব্য নেই